এবারের ‘ইত্যাদি’ পর্বের ধারণা হয়েছে নদীতীরবর্তী পলি জমির ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ প্রাঙ্গণে, যা প্রায় দেড় শতাব্দী পুরোনো। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গ্রাম্য জীবন ও সংস্কৃতির প্রতীক এই ভাওয়াইয়া লোকসংগীত কুড়িগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জীবনের গভীরে স্থাপিত। তাই এই পর্বে আবারও উঠে এসেছে ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গে কুড়িগ্রামের সম্পৃক্ততা, এর ঐতিহ্য, শিল্পী ও ইতিহাসের কথা, যেগুলো নাটক, প্রতিবেদন, গান ও নিয়মিত পরিবেশনায় স্থান পায়। হানিফ সংকেত এ বিষয়গুলো পরিষ্কার করেছেন।
এবারের পর্বে দুটি গানের পরিবেশন রয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে কুড়িগ্রামের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে মনিরুজ্জামান পলাশের লেখা একটি পরিচিতিমূলক গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। এই নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন এস কে জাহিদ, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা, এবং সুর ও সংগীতের আয়োজন করেছেন হানিফ সংকেত ও মেহেদী। ചিলমারী বন্দরকে কেন্দ্র করে আব্বাসউদ্দীনের জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গান ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’ নতুন গান হিসেবে গেয়েছেন সালমা আকতার এবং উত্তরাঞ্চলের প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী পূর্ণচন্দ্র রায়।
দর্শকদের জন্য প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কুড়িগ্রামকে ঘিরে করা হয় আর একটি পর্ব, যেখানে ৪ জন দর্শকদের মধ্য থেকে নির্বাচন করে সুরের শহর কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গানের শিল্প ও ইতিহাসের ওপর আলোচনা ও পরিবেশনা হয়।
‘ইত্যাদি’ মূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা, নানা অজানা বিষয় ও শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। এবারের পর্বেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলি, যেমন— কুড়িগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মহারাণী স্বর্ণময়ী, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বাড়ি, বীর প্রতীক তারামন বিবি, মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাসহ অন্য অনেক বিষয়। অংশ হিসেবে রয়েছে ভোজপতি ভূষণ বর্মার ভাওয়াইয়া চর্চা, প্রচার ও নতুন প্রজন্মকে সংগীতের তালিম দেওয়ার উদ্যোগের ওপর বিশেষ প্রতিবেদন। এই শিল্পীর অবদান ভাওয়াইয়া সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ও তার শিক্ষার্থীরা একত্রে একটি গান পরিবেশন করেন। ২০১১ সালে দুর্গম কুড়িগ্রামের যুবক আব্দুল কাদেরের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়েছিল, যার ফলোআপ ও সম্প্রসারণ মূলক প্রতিবেদনও এই পর্বে তুলে ধরা হয়।
কুড়িগ্রামের প্রায় চার শতাধিক চর ও চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা, সম্ভাবনা নিয়ে করা হয়েছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এছাড়া, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিলমারীর ‘রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
বিদেশি বিষয়বস্তুও রয়েছে, যেখানে দেখানো হবে সিঙ্গাপুরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপ—সেন্ট জনস আইল্যান্ড ও রহস্যময় কুসু দ্বীপ।
পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। এই পর্বটি ৩১ অক্টোবর প্রেসিজ, শুক্রবার রাতে, বাংলা সংবাদের পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হবে। ‘ইত্যাদি’র রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত, আর নির্মাণ করেছেন ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর হিসেবে রয়েছে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।