ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৫০তম রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম বা আবাসিক বৃত্তি পেয়েছেন ছয়জন তরুণ নির্মাতা। এই সুযোগে তারা প্যারিসে অবস্থান করবেন আগামী ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তারা সেখানে তাদের প্রথম বা দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য উন্নয়নের জন্য নানা দিকনির্দেশনা ও সহায়তা পাবেন। এই রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীলতা জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ৫০তম আসরেও এটি নতুন এবং বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গির চলচ্চিত্র নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তরুণ এই ছয় নির্মাতা হলেন:
মাকসিম নাকোনেচনি (ইউক্রেন): কিয়েভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব থিয়েটার, সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন থেকে পরিচালনায় স্নাতক। তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বাটারফ্লাই ভিশন’ ২০২২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত হয়। তিনি বলেন, “এই রেসিডেন্সিতে অংশ নেওয়া মানে স্বজন নিরাপদ পরিবেশে আমার প্রকল্পের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারা। ইউক্রেনের বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এই সহায়তা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমাকে আমার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।”
বারান সারমাদ (ইরান): তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘স্পটেড ইয়েলো’ ২০১৯ সালে লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। তিনি ছিলেন কানের পাম দ’র মনোনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘অর্থডনটিক্স’-এর প্রযোজক। বর্তমানে তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মেলো পিংক’ এর চিত্রনাট্য তৈরি করছেন। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় আমি এমন সমাজে grew up করি যেখানে মেয়েদের নেতৃত্বের স্বপ্ন অবিশ্বাসের চোখে দেখা হতো। চলচ্চিত্র নির্মাণও ছিল আমার স্বপ্নের একটি সাহসী পদক্ষেপ। কানে এই রেসিডেন্সি আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে ও নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”
লাইস সান্তোস আরাউজো (ব্রাজিল): ১৯৯৩ সালে ব্রাজিলের মেসিও শহরে জন্মগ্রহণকারী এই নির্মাতা ‘আগুদা সিনেমা’ নামে একটি প্রডাকশন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইনফ্যানতারিয়া’ ৭৩তম বার্লিনালের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পায়। বর্তমানে তিনি এই সংক্রান্ত আরও একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে আমার লেখালেখি ও সিনেমা নিয়ে ভাবার জন্য এই রেসিডেন্সি একটা অসাধারণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে।”
ফেদেরিকো লুইস (আর্জেন্টিনা): ১৯৯০ সালে বুয়েনস আয়ার্সে জন্ম নেওয়া এই নির্মাতা তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘সাইমন দ্য লা মনটানা’ ২০২৪ সালে ‘লা সেমাইন দ্য লা ক্রিটিক’ থেকে গ্র্যান্ড প্রিক্স অর্জন করে। বর্তমানে তিনি তার নতুন প্রকল্প ‘দ্য ডগ ট্রেইনার’ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “কান রেসিডেন্সি আমাকে স্বপ্ন দেখার দারুণ এক সুযোগ করে দিয়েছে। আমি চাই এই সময় সিনেমা পড়া, লেখা এবং ভাবার জন্য ব্যয় করতে।”
অ্যালিকা বেদনারিকোভা (স্লোভাকিয়া): প্রাগভিত্তিক এই নির্মাতা ‘লিকুইড ব্রেড’ (২০২১) সিনেমা দিয়ে পরিচিত। এটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘লা সিনেফ’ বিভাগের নির্বাচিত ছিল। বর্তমানে তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অ্যাটেনশন হুরস’ তৈরির কাজ করছেন। তিনি বলেন, “চিত্রনাট্য বিকাশের শুরুতে এই সহায়তা পাওয়া আমার জন্য এক বিরল সুযোগ।”
ডিয়ান ওয়েইস (দক্ষিণ আফ্রিকা): তিনি ইউনিভার্সিটি অব কেপ টাউনে এমএ করেছেন এবং বর্তমানে নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনে পিএইচডি করছেন। তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভুলটারেস’ (২০২৫) ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়ে ইউনিফ্রঞ্চ স্বল্পদৈর্ঘ্য গ্র্যান্ড প্রিক্স অর্জন করে। তিনি বলেন, “প্যারিসে সাড়ে চার মাস কাটিয়ে আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখা সত্যিই স্বপ্নের মতো।’’
বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যে, দুই দশকের বেশি সময় ধরে কান রেসিডেন্সি তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এই ৫০তম আসরে অংশ নেওয়া ছয় নির্মাতা ভবিষ্যতের বৈশ্বিক সিনেমায় এক নতুন কণ্ঠ হিসেবে নিজের স্থান তৈরি করবেন বলে কান কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে।