বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে বিভিন্ন প্রতীক গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছে, যেমন ধানের শীষ, নৌকা, লাঙ্গল এবং দাঁড়িপাল্লা। এ প্রতিগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিচিতি এবং জনপ্রিয়তা প্রকাশ করে আসছে পুরো দেশের ভোটারদের কাছে। গোরা তথ্য অনুযায়ী, দেশের বড় এবং জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের প্রতীকগুলো কিভাবে শুরু হয়েছিল, তার বিবরণ এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে ধানের শীষ প্রতীকটি মূলত বিএনপির পরিচিত চিহ্ন হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো এই প্রতীকটি ব্যবহার শুরু করে। তবে এর আগে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এই প্রতীকটি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপের প্রতীক ছিল। পাকিস্তান আমলে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকা এবং হারিকেন প্রতীক ব্যবহার হয়েছে।
নৈরাজ্যপ্রবণ সময়ে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে অংশ নেয়। ১৯৭০ সালের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে, এই প্রতীকটি স্বাধীনতার পরেও বিভিন্ন নির্বাচনে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। অপরদিকে, লাঙ্গল প্রতীকটি মূলত জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক হিসেবে বর্তমানে কাজ করে চলেছে। এর ইতিহাস খুব পুরোনো না হলেও ১৯১৭ সালে অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল এটি। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমানের দল এই প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেয়।
অন্যদিকে, দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি শুরুতে স্বাধীনতা পরবর্তী নির্বাচনে জামায়াত ইসলামের প্রতীকের মধ্যে ছিল। তারপোপর এর ব্যবহৃত বিরতিতে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাদ দেয়, তবে পরে আদালতের নির্দেশে ফের ফিরে আসে। বর্তমানে, জামায়াতে ইসলামী এই প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
নির্বাচনী প্রতীক নির্ধারণের ক্ষেত্রে, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিয়ম মান্য করে। ১৯৯৭-৯৮ সালে কাদের সিদ্দিকীর দল গামছা মার্কা দাবি করলেও, পরে তাদের তা দেওয়া হয়। একইভাবে, ২০১৩ সালে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পর তারা প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা হারায়। তবে, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আদালত এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি এই প্রতীকের উপর ফের অনুশীলন চালাচ্ছে।
অতীতের এই ইতিহাস থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রতীকগুলো কেবল চিহ্ন বা সাইন নয়; এগুলো দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, সংগ্রাম, সাংগঠনিক অবস্থান এবং জনমানুষের প্রতি দলের সম্পৃক্ততার প্রতীক। প্রতিটি প্রতীকের পেছনে লুকানো রয়েছে দেশের রাজনৈতিক চেতনা ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।