ময়মনসিংহ জেলা বর্তমানে গুরুতর জনবল সংকটে ভুগছে যার কারণে সরকারি চিকিৎসা সেবা যথাযথভাবে প্রদান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সমস্যা মূলত বিভিন্ন শূন্যপদের কারণে সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রায় ৮৫০টির কাছাকাছি। এ পরিস্থিতিতে জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের উচ্চমূল্যের চিকিৎসা সেবায় সাধারণ মানুষ অর্থের বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলছেন। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ রোগী, সচেতন মহল এবং স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। জেলা স্বাস্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়ছেন, জনবল সংকট সমাধানে তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছেন যার মধ্যে রয়েছে নতুন কর্মীদের নিয়োগের পরিকল্পনা ও বিদ্যমান কর্মীদের বদলি ও পুনর্বিন্যাসের কার্যক্রম।
ময়মনসিংহ জেলা গঠিত হয় ১৩টি উপজেলাকে কেন্দ্র করে, এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম জেলা হিসেবে পরিচিত। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫৮ লাখের বেশি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এই দ্রুতবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য জেলার ১৩টি সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও একটি মা ও শিশু হাসপাতাল রয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান্য জনবল নেই, ফলে সেবার মান খুবই কম পতিত হচ্ছে।
সরেজমিন জানা যায়, জনবল সংক্রান্ত বৈষম্য এবং শূন্যপদ রয়েছে মোট ৮৪৮টি। মূলত, মঞ্জুরীকৃত পদ সংখ্যা ৩ হাজার ২৮৪ হলেও বর্তমানে কার্যরত রয়েছেন ২ হাজার ৪৩৬ জন, আর এখনও শূন্য রয়েছে ৮৪৮টি পদ। এই শূন্যপদে রয়েছে মেডিকেল অফিসার, স্বাস্থ্য সহকারী, স্টাফ নার্স, পরিসংখ্যানবিদ, ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট, অফিস সহায়ক, স্টোর কিপার, প্রধান হিসাবরক্ষণকারী এবং ড্রাইভার।
২০১৯ সালে সদ্য ওএসডি হওয়া ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগে বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। তিনি সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যেমন আরেকটু দ্রুত চিকিৎসক বদলি, পদের পুনর্বিন্যাস, এবং হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য চিঠি দেওয়া। তাতে কয়েকজন চিকিৎসক বদলি ও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখনি শরিক পরিস্থিতি উন্নত করতে বেশ কিছু পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের কাজ সামনে এসেছে।
২০২২ সালে, তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্বোধন হলেও, এখনো এ হাসপাতালে আন্তঃবিভাগীয় সেবা চালু হয়নি। পদ সৃষ্টি না থাকায় কার্যকর পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদসংখ্যা সৃজনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও, প্রয়োজনীয় পদ অনুমোদন এখনো পায়নি, যার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এখনও চালু হয়নি।
অবশ্য, স্বাস্থ্য বিভাগ পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে চলমান বিপুলসংখ্যক শূন্যপদ পূরণের জন্য সম্প্রতি ২৬১টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আরও পরে আবেদনকারীদের মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই নিয়োগের সফলতা আসন্ন জনবল সঙ্কট কাটিয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, যদি এই প্রক্রিয়া ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ না হয়, তবে ভবিষ্যতে তার বাতিলের শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায়, স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. ইশরাত জামান স্বীকার করছেন, নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি আনবে। তিনি আরও বলছেন, ইতোমধ্যে ৪৮তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ায় কিছু নতুন চিকিৎসকও দ্রুত নিয়োগের জন্য অপেক্ষা চলছে। এভাবে, জরুরি পদক্ষেপ ও নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু থাকলে দ্রুতই জনবল ঘাটতি কিছুটা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।