পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রাজনীতি এবং স্বজনপ্রীতি যেন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বাহিনীর জগতে, ফলে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম গুডস্ পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) এর বিভিন্ন কার্যক্রমে।
অদৃশ্য ক্ষমতার বলে একই কর্মস্থলে বছর বছর ধরে রয়েছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নায়েক দুলাল। ২০০৪ সালে নিয়োগের পর থেকে তিনি চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই তেই অবস্থান করছেন। অন্য স্টাফদের ক্ষেত্রে যেমন দ্রুত বদলী হয়, তেমনি দুলাল দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে থাকছেন। তবে অদ্ভুতভাবে, লাগাতার অপরাধ করেও বছরের পর বছর তিনি রয়েছেন এই মঞ্চে, কথিত ক্যাশিয়ার হিসেবে।
সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি সার্কেল ও চৌকির দপ্তর খরচের জন্য সরকারি আলাদা ফান্ড না থাকায় অসংখ্য অনিয়ম ও অনিচ্ছাকৃত দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে। এতে কেউ কোনও অনানুষ্ঠানিক অনুমোদন না নিয়েই ঝুঁকি ভাতা, রেশন ভাতা ও অন্যান্য দাবির নামে অর্থ তোলার চেষ্টা করছে। এর ফলে বাহিনী পরিচালনার জন্য মেস চালানো এবং দাপ্তরিক খরচ চালানোর জন্য অনেক সময় তাদের ব্যক্তিগত আয় ব্যবহৃত হচ্ছে। এর জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠছে বেশ কিছু সদস্য, যারা অসাধু উপায়ে অর্থ অর্জনের সুযোগ নিচ্ছে। পারস্পরিক যোগসাজশে অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাব ও আনুষ্ঠানিকতা ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা ও সুবিধা নিয়ন্ত্রণে রাখার আলোচনা চলমান।
এছাড়াও, নায়েক দুলালকে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়ে জানা যায়, তাকে সিজিপিওয়াই এর কথিত ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজে নেওয়া হয়েছিল। পত্রিকা মাধ্যমে জানা যায়, কিছুদিনের জন্য অন্য পোষ্টিং হাবিলদার জসীম উদ্দিন সরকার আখাউড়ায় বদলি হয়েছেন, এরপর দুলালকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে, চীফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই অনৈতিক পদটি অবশ্যই বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এখনও পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
সিজিপিওয়াই থেকে জসীম উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়া হলেও, অন্য সার্কেল ও চৌকির পোষ্টিং হাবিলদার পদটি এখনও বহাল থাকায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। ওই বিষয়ে একাধিক সদস্য জানান, কিছু সদস্য দলীয় স্বার্থ ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বাহিনীর নিয়ম লঙ্ঘন করে বেআইনি কাজ চালাচ্ছে। নিদর্শন হিসেবে বলা যায়, যখনই কেউ বদলী হয়, তাকে একই অবস্থানে রেখে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতারা পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার ফলে বাহিনীর শৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চাকরি জীবনে একসাথে কাজ করায় চিরকালীন ঘনিষ্ঠতা থাকায় চীফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি চালু রয়েছে। এর ফলে, পূর্বাঞ্চলে অনিয়মের মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
গত ১৯ অক্টোবর সিজিপিওয়াই থেকে নায়েক দুলালকে চট্টগ্রাম স্টেশনের জেনারেল শাখায় বদলি করার একদিনের মধ্যেই, ২০ অক্টোবর আবারো তাকে ফের সিজিপিওয়াই এ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর কারণ, সেখানকার খাবার মেস চালানোর জন্য দুর্বোধ্যভাবে টাকা-পয়সা সংগ্রহের জন্য এই বদলি। এই বিষয়ে চীফ কমান্ড্যান্ট আশাবুল ইসলামকে ফোন করলে, তিনি দুলালের ফেরার বিষয় স্বীকার করেন। আরও জানা যায়, দুলালের পাশাপাশি হাবিলদার কুতুব উদ্দিনের দীর্ঘদিনের ভুয়া টিএ বিল তৈরির কারসাজি, বাহিনীর সদস্যদের অর্জিত টিএ বিল থেকে ২০% করে নেওয়া এবং নিজের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়গুলো। আশাবুল ইসলাম জানান, অতি শিগগিরই তাদের স্থানান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কারণ স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা। রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) কে এই বিষয়ে ফোনে না পাওয়ায় ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিস্তারিত আসছে পরবর্তী প্রতিবেদনে।