বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জাহাজ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড স্লিপওয়েজ লিমিটেড সম্প্রতি তুরস্কের নো-পাক শিপিং সংস্থার জন্য একটি আধুনিক ওয়েজ ওয়ার নামে ৫৫০০ ডেডওয়েট টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস ভেসেল রপ্তানি করে। এই অর্জন বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নতুন এই জাহাজের সফল রপ্তানি দেশের গ্লোবাল বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতা করার ক্ষেত্রেও ভীষণ উৎসাহ যোগাবে বলে মনে করছেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. তারিকুল ইসলাম বলেন, ওয়েজ ওয়ার রপ্তানির মাধ্যমে আমরা কেবলমাত্র একটি নতুন বাজারে প্রবেশ করেছি তা নয়, আমাদের কারিগরি মানের ওপর আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের ক্ষমতা আরও বেশি করে প্রমাণ করতে পেরেছি। ইতিমধ্যে নতুন আরও অর্ডার আসার খবর এসেছে, যা বোঝায় আমাদের ভবিষ্যৎ উদ্যেগ আরও প্রসারিত হতে পারে। বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশি জাহাজের উচ্চমান, সময়ে সরবরাহ এবং মূল্য প্রতিযোগিতায় সন্তুষ্ট থাকছেন, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
তিনি আরও জানান, এই সফলতা বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে শুধু অভ্যন্তরীণ পরিধিতেই সীমাবদ্ধ না রেখে বিশ্ব বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম করছে। তিনি আশা করেন, এই অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে আরো উন্নত করতে দেবে নতুন সুযোগ।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের জাহাজশিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা জানাচ্ছেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, যথাযথ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, বিনিয়োগের সুবিধা, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ব্যবস্থা, স্বল্প সুদের ঋণ, ও বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন এই শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ জাহাজ রপ্তানির এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং সেই সঙ্গে সৃষ্টি হতে পারে ১ লাখের বেশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৩০০টি শিপইয়ার্ড রয়েছে, এর মধ্যে কিছু বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ করছে। দেশীয় দক্ষ শ্রমশক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদীয়মান জাহাজ নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে উল্লেখযোগ্য, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গত এক দশকে জাহাজ রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়েছে, আর আয়জনকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে জ্বালানী পরিবহন জাহাজের ৯০ শতাংশ, কার্গো জাহাজের ৭০ শতাংশ এবং যাত্রী পরিবহনের অর্ধেকের বেশি জলপথে পরিচালিত হয়। এই চাহিদার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০০টি শিপইয়ার্ড, যেখানে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানে জাহাজ নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির এই খাতে বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানো জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সরকারি সহযোগিতা এবং ব্যাংকিং সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা পূরণ করা সম্ভব নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তারা বলছেন, এই উদ্যোগের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির জাহাজ রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।