আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা আইএমএফ এশীয় দেশগুলোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা কমাতে হবে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতি আরও শক্তিশালী করতে হবে। মূলত মার্কিন শুল্ক নীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ থেকে নিজস্ব ঝুঁকি কমানোর জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করা হয়।
আইএমএফের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের অর্থনীতি চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে বাণিজ্য। তবে সম্প্রতি মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে এখানকার অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি বাড়ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে এশিয়া অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও বেড়েছে। আইএমএফের মতে, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে এবং অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করে এশীয় দেশগুলো রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনতে, ব্যয় কমাতে এবং শুল্কজনিত ধাক্কা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন উল্লেখ করেন, যদি এই অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আরও বেশি সংহতি গড়ে তোলে, তবে তা বহিরাগত অর্থনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বাফার হিসেবে কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আহ্বান জানানো প্রয়োজন, কারণ বর্তমানে দ্বিপাক্ষীয় চুক্তিগুলো জটিলতা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ মানদণ্ড সৃষ্টি করছে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে বজায় থাকা অশুল্ক প্রতিবন্ধকতাগুলো এখনো এশিয়ার বাণিজ্যের জন্য বড় বাধা হয়ে রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। শ্রীনিবাসন বলছেন, কিছু দেশ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা কমাচ্ছে, যা খুবই ইতিবাচক প্রবণতা।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী, আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতি বাড়ালে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) মাঝারি মেয়াদে ১.৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া, আসিয়ান দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ৪ শতাংশের কাছাকাছি যেতে পারে।
২০২৫ সালের জন্য আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এশিয়ার অর্থনীতি ৪.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, যা গত বছরের ৪.৬ শতাংশের তুলনায় সামান্য কম হলেও, এপ্রিলের পূর্বাভাসের থেকে ০.৬ শতাংশ বেশি। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভাব্য মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি শুরুর আগে এশিয়া রপ্তানি বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে।
অপরদিকে, ২০২৬ সালে এই প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৪.১ শতাংশে নামতে পারে, কারণ বাণিজ্য উত্তেজনা, চীনের দুর্বল চাহিদা এবং উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর ভোক্তা ব্যয় হ্রাসের কারণে। সূত্র: রয়টার্স
আজকালের খবর / এমকে


















