সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া হয়, তাহলে দলের লাখো সমর্থক পুরো নির্বাচনের বয়কট করে দেবে। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের কারণে জাতির জন্য বেআইনি ও আত্মঘাতী প্রভাব পড়বে। রয়টার্সের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী সরকার বৈধতা পাবে শুধুমাত্র নির্বাচন দিয়ে। কোটি কোটি মানুষ আওয়ামীলীগকে সমর্থন করে—তারা ভোট দেবে না। যদি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চান, তাহলে এত মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়।”
অভিযুক্ত অনিয়ম ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে এক বছর আগে বাংলাদেশে থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এ পর্যায়ে এসেছেন। তিনি এই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দেন, যার মধ্যে রয়টার্স, এএফপি এবং ইনডিপেনডেন্ট ছিল। এগুলো বুধবার একযোগে প্রকাশিত হয়।
মাস দুয়েক আগে, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের চাপের কারণে মে মাসে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর পর দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশোধন করে নতুন আইন, যার ফলে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অ্যারাজনের পথে বাধা পড়ে।
অক্টোবর মাসে ট্রাইব্যুনাল নতুন করে আইন সংশোধন করে বলে যে কেউ যদি আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়, তাহলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারাবেন। এই অমুকোপনে শেখ হাসিনার নির্বাচনের সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা জানান, তিনি আশা করেন, শেষ পর্যন্ত বিবেকের জয় হবে এবং তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি পাবেন। তবে তার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো নেপথ্য আলোচনা চলতে থাকার বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও, আওয়ামী লীগ তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালন করতে ফিরে আসবে—সরকারে থাকুক বা বিরোধীদলে। তিনি দাবি করেন, এই দল তার পরিবার বা ব্যক্তিগত নেতৃত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং পুরো দেশের জন্য দেশের স্বার্থে এগিয়ে যেতে সক্ষম।
তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এক বছর আগে রয়টার্সকে বলেছিলেন, দলের প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিবেচনা করতে পারেন। তবে শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেন, “এটা আমার বা আমার পরিবারের বিষয় নয়। আমাদের সবাইকে একটাই স্বপ্ন—একটি বিবেকবান, সুষ্ঠু ও ধারাবাহিক রাজনৈতিক পরিবেশে ফিরে যাওয়া। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ একক কোনো ব্যক্তির বা পরিবারের হাতে নেই।”
রয়টার্সের তথ্যে, কিছু মাস আগে তাকে দিল্লির লোধি গার্ডেনে হাঁটতে দেখা গেছে। সঙ্গে ছিল তার নিরাপত্তাকর্মীরা। তারা পথচারীদের দ্বারা চিনে ফেললে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি মাথা নেড়ে চরিত্র প্রকাশ করেন। হাসিনা বলেন, “অবশ্যই আমি দেশে ফিরতে চাই, যদি সেখানে বৈধ সরকার থাকে, সংবিধান কার্যকর থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা সুস্থ থাকে।”
শেখ হাসিনা বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রস্তুতিতে তিনি থাকছেন না। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ। তিনি এ ব্যাপারে বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল যদি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়, তিনি তা শুনে বিস্মিত বা ভয় পেতেন না। তিনি মনে করেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক স্বঘোষিত বিচার।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্ট সময়ে আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ১৪০০ এর বেশি মানুষ মারা গেছে। শেখ হাসিনা এই সংখ্যা অস্বীকার করে বলেন, সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত। তিনি বলেন, “আমরা অনেক পরিবার ও সমর্থকদের শোক করি, যারা প্রাণ হারিয়েছেন।” তিনি আরামদায়ক অবস্থায় নির্বিঘ্নে পুলিশি হামলার জন্য দায়ভার এড়িয়ে যেতে চান।
তিনি দাবি করেন, যুবকদের গুলির নির্দেশ তিনি দেননি, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার নির্দেশনা মান্য করে। তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি পরিস্থিতিতে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ছিল। উত্তেজনা থাকায় কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য হয়তো দুঃখ প্রকাশ করছি।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন স্বাধীন সূত্রে বলা হয়, জুলাই থেকে অগাস্টের মধ্যে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হতে পারে। তবে শেখ হাসিনা এই সংখ্যাকে অস্বীকার করে বলেন, সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত।
তার দাবি, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দৃঢ় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছেন। তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ছিল। জনতা উস্কে দিলে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, ৫ অগাস্ট দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ, সেখানে থাকলে জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
শেখ হাসিনা এও বলেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার ইচ্ছে রাখেন, যদি দেশের অবস্থা সুষ্ঠু থাকে, আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক হয় ও সংবিধান কার্যকর হয়। না হলে আপনি আর আপনার আশপাশের মানুষরাও ঝুঁকিতে পড়বেন।


















