কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র ও তাদের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে পৌর শহরের বাস-টার্মিনাল এলাকায় ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এই বিষয়টি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, এক রোগীর থেকে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এর পেছনে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত।
এসময় ক্লিনিকের পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ২০ অক্টোবর মিথী আক্তার নামে এক নারী প্রসব ব্যথায় ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায় যে তার গর্ভে সন্তানের হার্টবিট অস্বাভাবিক এবং প্রসব বাধাগ্রস্ত। চিকিৎসকগণ দ্রুত সিজার অপারেশনের পরামর্শ দেন, কিন্তু রোগীর স্বজনরা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অনুরোধ জানান। তাদের মতামত সম্মান জানিয়ে একই দিন বিকেল ৬টায় নার্সের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়। প্রসবের পরে নবজাতককে দ্রুত অক্সিজেন, অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরে ২৪ অক্টোবর নবজাতকের বাবা বেলাল বকসী উলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, যেখানে চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার সমাধানে ২৬ অক্টোবর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সাথে থানায় আলোচনা ও সমঝোতা হয় বলে দাবি করেন তারা।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ২৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি উলিপুর, চিলমারী, রাজারহাটের বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। এখানকার সেবা স্থানীয় মানুষের জন্য একটি অভয়ারণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের সুনাম নষ্ট করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিচালক প্যানেলের সদস্য ডা. লোকমান হাকিম, ম্যানেজার মিল্টন খন্দকারসহ অন্য কর্মচারিরা।
অপরদিকে, চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ২৮ অক্টোবর উলিপুর শহরে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ব্যাপক অংশগ্রহণ করেন এবং ন্যায়বিচারের দাবী জানান। কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সত্যতা পেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জিল্লুর রহমান জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ ক্লিনিকে গিয়েছিল এবং পরে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০ অক্টোবর উলিপুরের পৌরসভার নাড়িকেলবাড়ি এলাকায় বিথি খাতুন নামে এক নারীর সন্তান জন্মগ্রহণের সময় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ সময় নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। সে সময়ের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠে সমাজের বিভিন্ন স্তরে।
 
	    	

















