দেশে খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি ক্রমশ আরও জটিল হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের লক্ষ্য হিসেবে দেশের খেলাপি ঋণ কমানোর অঙ্গীকার থাকলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। তবে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আন্তঃআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে গোপন রাখা বহু পরিমাণ খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশের জন্য তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
অথচ, একই সময়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠন, পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আইএমএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বৈঠকে বাংলাদেশের কৃষি ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে হবে। তবে, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর গোপনভাবে দেশের খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ প্রকাশ হতে শুরু করে। চলতি বছরের জুনের শেষে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ছifiéeষষ্ঠ হাজার কোটি টাকা, যা আগের তুলনায় প্রায় চার লাখ কোটি টাকা বেশি। বর্তমানে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪০ শতাংশের বেশি; আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এই হারও ১০ শতাংশের ওপরে পৌঁছেছে।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও, সংস্থাটি সতর্ক করেছে যেন দীর্ঘমেয়াদি সংকোচনমূলক নীতি বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি না করে।
এছাড়াও, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, পুনরায় মূলধনায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং সবুজ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়েও আইএমএফের দল জানতে চেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত ভিজিট করছে। তারা ঋণের শর্তসমূহ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সুবিধা, রিজার্ভ ব্যবস্থার ব্যবহার ও খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
 
	    	

















