বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের সার্ভারে জালিয়াতির ঘটনায় বিস্তৃত আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেলো কোটি টাকার বেশি। এই জালিয়াতি ঘটেছে, একটি চক্রের মাধ্যমে যারা অননুমোদিতভাবে সঞ্চয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করে অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে আসছিল। মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে উঠেছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ মারুফ এলাহী রনি, তাঁর সঙ্গে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
মতিঝিল থানায় এই মামলাটি দায়ের করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ। অভিযুক্তরা হলেন—মোহিউদ্দিন আহমেদ, এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর শাখার গ্রাহক মো. আরিফুর রহমান মিম, এবং তার পরিচয় শনাক্তকারী আল আমিন। পুলিশ ইতোমধ্যে আরিফুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
জালিয়াতির পদ্ধতি বেশ জটিল ও নিয়মবিরুদ্ধ। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চক্রটি জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এনএসসি সার্ভারে অননুমোদিত প্রবেশ করে গ্রাহকদের তথ্য পরিবর্তন করে সঞ্চয়পত্রের অর্থ অন্য কোনও ব্যাংকে স্থানান্তর করে। ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে একাধিক সঞ্চয়পত্র নগদায়ন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার অপচেষ্টা চালানো হয়।
গত ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে তারা তিনটি সঞ্চয়পত্রের তথ্য বদলে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবিসির হিসাবের মাধ্যমে মোট ৭৫ লাখ টাকা স্থানান্তর করার চেষ্টা করে, তবে দ্রুততর ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এই অর্থের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এজাহারে বলা হয়, মহামূল্যবান একটি সঞ্চয়পত্রের জাল লেনদেনে, নিরীক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তার নামে কেনা ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভুয়া রূপে নগদায়ন করে আরিফুর রহমান মিমের হিসাবের মধ্যে জমা হয়। এরপর তা ঢাকার দুটি শাখা থেকে উত্তোলন করা হয়। মামলার আরও উল্লেখ করা হয়, তার লেনদেনের সীমা ছিল ২ লাখ টাকা, কিন্তু জালিয়াতি করে তা ১০ লাখে পৌঁছে দেওয়া হয়।
আসামিদের নামে থাকা সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে দুইটি ৫০ লাখ টাকার জমা হয়, যা পাঁচ বছরের মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র। সময়মতো জালিয়াতি শনাক্ত হয়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আগে বিষয়টি ধরা পড়ে এবং অর্থের বড় অংশ ফিরে আসে।
ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউ ও এনআরবিসি ব্যাংক আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডধারী তিন কর্মকর্তা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ও সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার জব্দ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসে নিরাপত্তা জোরদার করে নতুন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
ঘটনার কারণে বাংলাদেশের সঞ্চয়পত্র কার্যক্রমে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে, যার ফলে গ্রাহকরা ভুগছেন। বর্তমানে তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র চলমান থাকলেও, এর প্রায় ৩০ শতাংশ বিক্রি হয় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখার মাধ্যমে। পাশাপাশি বিএফআইইউ সন্দেহভাজন সব হিসাব জব্দ করেছে।
এমন গুরুতর অপরাধের পর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করছে এবং সন্দেহভাজন হিসাবগুলোর উপর নজরদারি চালাচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে আর এমন জালিয়াতি রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
	    	

















